এমপক্স ঠেকাতে সতকর্তা: বিমান যাত্রীদের পরীক্ষা শুরু

শুক্রবার থেকেই যাত্রীদের এমপক্স পরীক্ষা শুরু হয়েছে, বলেছেন বিমানবন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক।



বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করা এমপক্স ঠেকাতে সব বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা (স্ক্রিনিং) শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

শুক্রবার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন এয়ারলাইনসের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শনিবার বিমানবন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. ইশরাক শাহরিয়ার এঞ্জেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৬ অগাস্ট থেকে স্ক্রিনিং শুরু করেছেন তারা।

 

“আমরা নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই বিদেশফেরত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করছি। এটা শুরু হয়েছে গতকাল থেকে।”

কোভিড মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেশে দেশে যুদ্ধবিগ্রহে বিপর্যস্ত বিশ্বে এবার উদ্বেগ ছড়িয়েছে এমপক্স। এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে এমপক্স কোভিডের মতো অতিমারী হয়ে উঠবে কি না, তার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও। এরই মধ্যে বিশ্বকে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

শুক্রবারের বৈঠকের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলার সময় বিদেশ থেকে আসা সব যাত্রীর বিমানবন্দরেই স্ক্রিনিং করার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

“প্রথম দিকে আমরা ভেবেছিলাম আফ্রিকান দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং করব, পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে সব যাত্রীকেই স্ক্রিনিং করা হবে।”

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উপগর্স রয়েছে এমন অনুমান করা গেলে সে যাত্রীকে আইইডিসিআর এর তত্ত্বাবধানে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল ও সংক্রামকব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হবে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এম নিকামরুল ইসলাম, সদস্য (অপারেশন) এয়ার কমডোর এএফএম আতীকুজ্জামান, ডা. শেখ দাউদ আদনান, আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর এবং বিভিন্ন এয়ারলাইনসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

 

এমপক্স নিয়ে এয়ারলাইনসগুলোকে সতর্ক থাকতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এমপক্সের উপসর্গের যাত্রী থাকলে দ্রুত স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিদেশ থেকে আসার ২১ দিনের মধ্যে এমপক্সের উপসর্গ দেখা দিলে ১০৬৫৫ নম্বরে কল করতে অনুরোধ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, পিঠে ব্যথা, দুর্বলতা, ফোলা লসিকা গ্রন্থি ও ত্বকের ফুসকুড়ি বা ক্ষত মাঙ্কিপক্সের সাধারণ উপসর্গ।

আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে ‘বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তৈরি করার মতো জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও।

শুক্রবার পাকিস্তানেও এমপক্স্ আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ তথ্য দেয়। সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা রোগীদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

বিবিসি লিখেছে, এবার ভাইরাসজনিত অতিসংক্রামক রোগটি ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর (ডিআরসি) পর প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ছড়িয়েছে। আগে এমপক্স হিসেবে পরিচিত অত্যন্ত সংক্রামক এই রোগের প্রাথমিক প্রাদুর্ভাব চলাকালে ডিআর কঙ্গোতে অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এই রোগটি এখন মধ্য ও পূর্ব আফ্রিকায় বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগের নতুন একটি ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকায় ও এর উচ্চ মৃত্যু হারের কারণে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।

রয়টার্স জানাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে বুধবার একটি জরুরি কমিটি ডব্লিউএইচও এর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুসের সঙ্গে দেখা করে রোগটির প্রাদুর্ভাব ‘আন্তর্জাতিক উদ্বেগ তৈরি করার মতো জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা’ বা পিএইচইআইসি তৈরি করেছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা করেন।

বিবিসি লিখেছে, এমপক্স ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ যেমন যৌন সম্পর্ক, গায়ে গা লাগা ও অন্য জনের খুব কাছে গিয়ে কথা বলা বা নিঃশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়।

এই রোগের সংক্রমণে জ্বরের মতো লক্ষণ দেখা দেয়, চামড়ায় ক্ষত তৈরি হয় আর এটি প্রাণঘাতী হতে পারে; এই রোগে আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়।

এমপক্সের দুটি ধরন আছে- ক্লেইড-১ ও ক্লেইড-২।

এর আগে ২০২২ সালে ক্লেইড-২ এর তুলনামূলক মৃদু সংক্রমণ চলাকালে জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এবার অধিক প্রাণঘাতী ক্লেইড-১ এর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে ক্লেইড-১ ভাইরাসটিতেও একটি পরিবর্তন ঘটেছে। মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হওয়া ভাইরাসগুলোকে ক্লেইড-১বি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে আর এটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। একজন বিজ্ঞানী এমপক্সের এই ধরনটিকে ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক’ বলে মত দেন।

চলতি বছরের শুরু থেকে ডিআর কঙ্গোতে ১৩ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি এমপক্স রোগী শনাক্ত হয়েছেন আর তাদের মধ্যে অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তারপর থেকে ডিআর কঙ্গোর প্রতিবেশী দেশ বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কেনিয়া ও রুয়ান্ডাতেও রোগটি ছড়িয়েছে।