দেশের অন্তত ২৫ জেলায় শিক্ষার্থীদের গণমিছিল
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় গণমিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুক্রবার (২ আগস্ট) অন্তত ২৫টি জেলায় কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে।
জেলাগুলো হলো— চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী, গাইবান্ধা, পিরোজপুর, সিরাজগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, জামালপুর, গাজীপুর, পাবনা, জয়পুরহাট, নাটোর, বগুড়া, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ, সিলেট, ভোলা, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফেনী ও কুমিল্লা।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গণমিছিল করেছে আন্দোলকারীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে থাকে। পরে মিছিল নিয়ে সড়কে উঠতে চাইলে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শুক্রবার সকালে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সাথে একাত্মতা জানিয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও যোগ দেন। গণগ্রেফতার বন্ধ, ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারসহ ক্যাম্পাস দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি জানান তারা। পরে গণমিছিল নিয়ে নগরীর মর্ডান মোড়ে যান শিক্ষার্থীরা।
লক্ষ্মীপুরে জুমার নামাজের পর মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি চকবাজার মসজিদের সামনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
নরসিংদীতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা গণমিছিল করেছে। জেলা পৌর শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়। মিছিলে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে।
চট্টগ্রামেও ৯ দফা দাবিতে মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুক্রবার নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মিছিলে হাজারও মানুষ যোগ দেন। পরে মিছিলটি লালদিঘি, পুলিশ প্লাজা হয়ে নিউমার্কেট চত্বরে আসে। এ সময় গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিও জানানো হয়।
শুক্রবার বৃষ্টি উপেক্ষা করেই গাইবান্ধায় গণমিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। জুমার নামাজের পর বড় মসজিদ এলাকা থেকে মিছিলটি বের হয়। পরে মিছিল নিয়ে শনি মন্দির সড়ক হয়ে মহিলা কলেজের পিছনের সড়কে যায় শিক্ষার্থীরা।
পিরোজপুরেও গণমিছিল করেছে আন্দোলকারীরা। মিছিল শেষে নগরীর পুরাতন বাসস্ট্যাণ্ড এলাকায় সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনায় জড়িতদের বিচারেরও দাবি জানান তারা।
সিরাজগঞ্জে কোটা আন্দোলন ঘিরে হতাহতদের জন্য দোয়া ও গণমিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। মিছিলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এ সময় মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে বাধার দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের বাধায় তাদের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। শুক্রবার বিকেলে উপজেলা সদরের হাসপাতাল সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে, জামালপুরেও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পুলিশি পাহারায় বৃষ্টি উপক্ষো করে সমাবেশ করেন তারা। শুক্রবার বিকেলে পৌর শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় বঙ্গবন্ধু চত্বরে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গাজীপুরের সফিপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে কোটা আন্দোলন ঘিরে নিহত শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার ও গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান তারা। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা বিক্ষোভে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
পাবনায় গণমিছিল করেছে আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার জুমার পর ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
জয়পুরহাটে গণমিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে শহরের নতুন হাট ও বাজলা স্কুল থেকে মিছিলটি বের হয়। পরে মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে রেলগেইট এলাকায় আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর বাটার মোড় এলাকায় তারা বিক্ষোভ করে।
অন্যদিকে, নাটোরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে শহরতলীর কাফুরিয়া বাজার থেকে একটি মিছিল বের করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে প্রায় আধঘণ্টা সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে।
নয় দফা দাবিতে বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা গণমিছিল করেছে। শুক্রবার বিকেলে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় জড়ো হয় তারা। পরে মিছিল নিয়ে সামনে যেতে চাইলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এরপর পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আন্দোলনকারীরা। এতে সাধারণ মানুষও অংশ নেন। পরে শহরের সাতমাথা বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ার এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশও করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, শুক্রবার বিকালে রাজবাড়ী জেলার কাজী হেদায়েত হোসেন স্টেডিয়াম এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কিছুটা অগ্রসর হলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। পরে পুলিশের অনুমতি নিয়ে মিছিলটি প্রধান সড়ক হয়ে পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
কিশোরগঞ্জ শহরে জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জ শহর।
ঝিনাইদহে গণপদযাত্রা ও বিক্ষোভ সমাবেশে করেছে আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার দুপুরে শহরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেরণা একাত্তর চত্বরে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। পরে আবার শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
এছাড়াও সিলেট, ভোলা, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফেনী ও কুমিল্লা জেলায় গণমিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।