মার্চ টু ঢাকা: সোমবার কী ঘটবে

অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে রোববার (৪ আগস্ট) দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরইমধ্যে সোমবার (৫ আগস্ট) ‘মার্চ টু ঢাকা’ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে এ দিন মাঠে থাকবেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। এ অবস্থায় সোমবারের কর্মসূচি ঘিরে জনমনে উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত শনিবার (৩ আগস্ট) এক দফা দাবিতে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে রূপ নেয়। দাবি আদায়ের লক্ষ্য হিসেবে আন্দোলনকারীরা দেশব্যাপী অসহযোগ কর্মসূচি পালন করেন। এ কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা, হামলা ও সংঘর্ষে পুলিশের ১৪ সদস্যসহ প্রাণ গেছে ৮৬ জনের।

এ অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সোমবার (৫ আগস্ট) ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। আন্দোলনকারীরা এক দফা দাবি আদায়ে দেশের আপামর জন সাধারণকে এ দিন সড়কে নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
 
অন্যদিকে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আন্দোলন ঘিরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ তুলে তা দমনের কথা বলছে। এরই মধ্যে আগস্ট মাস ঘিরে তাদের কর্মসূচি পালনে সোমবারও নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে দলটি।  
 
তাই সোমবারের কর্মসূচি ঘিরে আরও অনেক প্রাণহানি দেখতে হবে কিনা তা নিয়েই উৎকণ্ঠা জনমনে।
 

 

লংমার্চ নিয়ে সমন্বয়কের বার্তা

 

বিকেলে ফেসবুকে নিজের আইডিতে এক পোস্টে লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি সোমবার পালন হবে বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
 
 
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করা হলো। অর্থাৎ আগামীকালই সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
 
তিনি আরও লেখেন, ‘আজ প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতাকে খুন করেছে খুনি হাসিনা। চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার সময় এসে গেছে। বিশেষ করে আশপাশের জেলাগুলো থেকে সবাই ঢাকায় আসবেন এবং যারা পারবেন আজই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। ঢাকায় এসে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা রাজপথগুলোতে অবস্থান নিন।’
 
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ সমন্বয়ক লেখেন, ‘চূড়ান্ত লড়াই, এই ছাত্র নাগরিক অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রাখার সময় এসে গেছে। ইতিহাসের অংশ হতে ঢাকায় আসুন সকলে। যে যেভাবে পারেন ঢাকায় কালকের মধ্যে ঢাকায় চলে আসুন। ছাত্র-জনতা এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাবে।’
 

 

কেন লংমার্চ কর্মসূচি নিয়ে শঙ্কা

 

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে জুলাই মাসে দেড়শ’র বেশি প্রাণহানির তথ্য জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অন্যদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে এ সংখ্যা আড়াইশ’র বেশি।
 
 
এদিকে অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার সারাদেশে পুলিশের ১৪ সদস্যসহ প্রাণ গেছে ৮৬ জনের। এত বেশি প্রাণহানি এবং রক্ত স্বাধীনতার পর আর দেখেনি বাংলাদেশ।
 
এ অবস্থায় সোমবার লংমার্চ কর্মসূচি ঘিরে আরও অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে।
 

 

নৈরাজ্য দমনের হুঁশিয়ারি সরকারের

 

এদিকে এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি থেকে জঙ্গি কায়দায় হামলা, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন সন্ত্রাসী ঘটনা এবং নৈরাজ্য থামাতে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
 
 
 
অন্যদিকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মো. আরাফাত বলেছেন, সরকার কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা দেখতে চায় না। জান-মালের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
 

 

আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগিতার ঘোষণা ফখরুলের

 

এদিকে আন্দোলনকে যৌক্তিক উল্লেখ করে শুধু সমর্থনই নয়, সর্বাত্মক সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সারা দেশের দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহযোগিতার পাশাপাশি শামিল হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।  
 
তিনি বলেন, ‘এবার তরুণরা জেগে উঠেছে। তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ছাত্রদের আন্দোলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে।’
 
 
 
তিনি অভিযোগ করেন, ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।
 
এ অবস্থায় সোমবারের আন্দোলন ঘিরে জনমনে ব্যাপক উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।